হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম
আমার প্রিয় উস্তাদ রাহবার অধ্যক্ষ আ ম ম শামসুল আলম চৌধুরীর হাতধরে কোন একদিন মেজবান খেতে এসেছিলাম মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিনের বাড়িতে। আরকান রোড হতে পশ্চিমে আঁকা-বাঁকা খানাখন্দকে ভরা রাস্তা মাড়িয়ে সেই যাত্রা। গন্তব্যে পৌঁছেই দেখলাম মেজবান বাড়ির পাশে সুবিশাল মাদরাসা। মনের অজান্তেই কখন যে ভালবেসে পেল্লোম সেই মাদরাসা ও গ্রাম ইছামতিকে। ২০১০ সনের মার্চ মাসে সুপার পদে যোগদান করি ইছামতি মুহাম্মদীয়া আদর্শ দাখিল মাদরাসায়। গ্রামের মানুষ সহজ সরল ভিষন অতিথি পরায়ন। মাদরাসায় রয়েছে পাঁচ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী, রয়েছে একঝাঁক উদ্যমী শিক্ষক ও দক্ষ পরিচালনা কমিটি। সরকারি সকল নির্দেশনা অনুসরণ করে মাদরাসা পরিচালিত হয়। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি চর্চার জন্য রয়েছে সুবিশাল মাঠ। প্রতি বৎসর বোর্ড পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে কৃতিত্তের সাথে উত্তীর্ণ হয়। শিক্ষার্থীরা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, কুরান-হাদিস, ফিক্হ ও এরাবিক বিদ্যা অর্জন করে ছড়িয়ে পড়–ক দেশ বিদেশে, প্রজ্জলিত করুক হেরার মশাল, তুলে ধরুক কলেমার মর্মবাণী, দুরিভূত করুক অজ্ঞতা ও নির্মমতা। সমাজ ও দেশ সেবায় এগিয়ে আসুক সোনার মানুষ হয়ে। আমার বিশ্বাষ শিক্ষার্থীরা এখানকার পড়া লেখা শেষ করে আরো উ”চতর ডিগ্রি নেয়ার জন্য ছুটে চলবে বিদ্যালয়-মহাবিদ্যালয়ে, থামবেনা তাদের গতি চুড়ান্ত মঞ্জিলে না পৌঁছে।
প্রতিষ্ঠাতার বাণী ও মাদরাসার ইতিহাস
সাতকানিয়া উপজেলার নদিবিধৌত একটি অজপাড়া গাঁয়ের নাম ইছামতি। উত্তর পূর্বদিকে পরিবেষ্টিত ইছামতি খাল পশ্চিম দক্ষিনে ডলু নদী। বলা যায় খাল ও নদীর মিতালী গ্রামের মানুষের সাথে। সবুজ গাছ-গাছালি ও শষ্য খেতের ভান্ডার গ্রামের ফসলি মাটি। সদর উপজেলা ও আরকান রোড হতে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দুরে গ্রামের অব¯’ান। অনুন্নত অবহেলিত যোগাযোগ বি”িছন্ন গ্রামের মানুষ হাট-বাজারে কিংবা মানবিক প্রয়োজনে বের হত ছোট্র মেটু রাস্তা ও বাঁশের সাাঁকু পেরিয়ে। আসপাশে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় বৈরি যোগাযোগ ব্যব¯’া মাড়িয়ে দুর দুরান্তে পড়া লেখা শিখতে যাওয়া এমন দুসাহসী ছেলে কয়জনই-বা ছিল। অশিক্ষা ও কুসংস্কারে মানুষ চুরা বালিতে হাবুডুবু খা”িছল। এমনই দুসময়ে আমি সহ এলাকার প্রবিন মুরব্বি হাজি অছিয়র রহমান, হাজি শফিকুর রহমান, হাজি মোঃ লোকমান, হাজি মতিউর রহমান, ডাঃ জিয়াউল হোসেন, নুরুল আমিন, মোজাফ্ফর আহমদ, আবু শরিফ ও মাওঃ আইয়ুব সহ অনেকে মসজিদের উঠোন বৈঠকে মিলিত হন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আলোকিত মানুষ করার করনীয় নির্ধারনে। উক্ত বৈঠকের ফলশ্রæতি ইছামতি মুহাম্মদীয়া আদর্শ দাখিল মাদরাসা। আলোর চেরাগ জালাতে এই দীপ সদৃশ গ্রামে ছুটে আসেন মরহুম পীর সাহেব খুটাখালি ও মরহুম পীর সাহেব বায়তুশ্শরফ সহ অনেক অলি আলাøাহগণ। এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ হত দরিদ্র যাদের নুন আনতে পান্তা পুরায় তারাও এগিয়ে আসেন একটি মাদরাসা হবে শুনে। অনেকে মাদরাসায় জমি দেয়ার ও অঙ্গিকার করেন। জমি দিয়ে রাসুলের বাগান করার সুযোগ করে দিয়েছেন-আমার সাথে আলহাজ্ব মোঃ লোকমান, মরহুম আবুল খাইর, মরহুম আবদুস সালাম, মরহুম আবদুস সাত্তার, মরহুম আবদুশ শুকুর, হাজী এজহার মিয়া, হাজী মরিয়ম খাতুন, কাঞ্চন আরা বেগম, হাসনারা বেগম ও মাজেদা খাতুন। মাদরাসার ভিত্তি প্রস্তর দেয়া হয় ১৯৮৬ সনে। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অশ্রæসিক্ত দোয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। তখনকার কেজি মাদরাসা পরে এবতেদায়ী আরো পরে দাখিল মাদরাসায় রূপান্তর হয়। মদিনার এই ছোট্র বাগানের নাম রাখা হয় ইছামতি মুহাম্মদীয়া আদর্শ দাখিল মাদরাসা। ১/১/১৯৯৬ সনে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড হতে ৯ম শ্রেণীর সাধারন বিভাগের পাঠদান অনুমতি, ১/১/১৯৯৭ সনে ১০ম শ্রেনির একাডেমিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয়। ১/১/২০০৫ সনে বিজ্ঞান বিভাগ ও কম্পিউটার বিষয় খোলার অনুমতি লাভ করে। ২০০১ সনের এপ্রিল মাসে ১ম এমপিও ভুক্ত হন শিক্ষক কর্মচারীগণ। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর হতে স্বীকৃতি ও এমপিও ভুক্তিতে যাদের অবদান অবিশ্বরনীয় জনাব অধ্যক্ষ আলহাজ্ব আ ম ম শামশুল আলম চৌধুরী (অধ্যক্ষ রাঙ্গুনিয়া আলমশাহ পাড়া কামিল মাদরাসা), মরহুম আলহাজ্ব মাওঃ সাইফুল হক (রাঙ্গুনিয়া), মাওঃ আবদুস সবুর (সুপার মুহাম্মদীয়া আদর্শ দাখিল মাদরাসা,গুজরা রাউজান) ও হাজী শামসুল আলম (রাউজান) সহ আরো অনেকের নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে শত শহ¯্র বছর। আশা নিরাশার দুলাচলে যখন মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয় তখন আমি টগবগে যুবক। কিছুদিন না যেতেই এলাকার মানুষ দল বেঁেধ মাদরাসার বিশাল গুরু দায়িত্বের ভার আমার কাঁধের উপর চাপিয়ে দেন। পাহাড়সম এই ভারি বোঝা বহন করার শক্তি সামর্থ আমার না থাকলেও আমি কামলে ওয়ালা নবির বাগানের মালি পরিচয় দেয়ার জন্য সেই বোঝা কাঁধ থেকে মাথায় তুলে নিয়ে আজো আছি, থাকব আমরন ইনশ আল্লাহ।