সাতকানিয়া উপজেলার নদিবিধৌত একটি অজপাড়া গাঁয়ের নাম ইছামতি। উত্তর পূর্বদিকে পরিবেষ্ঠিত ইছামতি খাল পশ্চিম দক্ষিনে ডলু নদী। বলা যায় খাল ও নদীর মিতালী গ্রামের মানুষের সাথে। সবুজ গাছ-গাছালি ও শষ্য খেতের ভান্ডার গ্রামের ফসলি মাটি। সদর উপজেলা ও আরকান রোড হতে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দুরে গ্রামের অবস্থান। অনুন্নত অবহেলিত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন গ্রামের মানুষ হাট-বাজারে কিংবা মানবিক প্রয়োজনে বের হত ছোট্র মেটু রাস্তা ও বাঁশের সাাঁকু পেরিয়ে। আসপাশে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় বৈরি যোগাযোগ ব্যবস্থা মাড়িয়ে দুর দুরান্তে পড়া লেখা শিখতে যাওয়া এমন দুসাহসী ছেলে কয়জনই-বা ছিল। অশিক্ষা ও কুসংস্কারে মানুষ চুরা বালিতে হাবুডুবু খাচ্ছিল। এমনই দুসময়ে আমার সাথে এলাকার প্রবিন মুরব্বি আলহাজ্ব আহমদ মিয়া, হাজি অছিয়র রহমান, হাজি শফিকুর রহমান, হাজি মোঃ লোকমান, হাজি মতিউর রহমান, ডাঃ জিয়াউল হোসেন, নুরুল আমিন, মোজাফ্ফর আহমদ, আবু শরিফ ও মাওঃ আইয়ুব সহ অনেকে মসজিদের উঠোন বৈঠকে মিলিত হন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আলোকিত মানুষ করার করনীয় নির্ধারনে। উক্ত বৈঠকের ফলশ্ৰুতি ইছামতি মুহাম্মদীয়া আদর্শ দাখিল মাদরাসা। আলোর চেরাগ জালাতে এই দীপ সদৃশ গ্রামে ছুটে আসেন মরহুম পীর সাহেব খুটাখালি ও মরহুম পীর সাহেব বায়তুশ্শরফ সহ অনেক অলি আল্লাহ্গণ । এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ হত দরিদ্র যাদের নুন আনতে পান্তা পুরায় তারাও এগিয়ে আসেন একটি মাদরাসা হবে শুনে। অনেকে মাদরাসায় জমি দেয়ার ও অঙ্গিকার করেন। জমি দিয়ে রাসুলের বাগান করার সুযোগ করে দিয়েছেন-আমার সাথে আলহাজ্ব মোঃ লোকমান, মরহুম আবুল খাইর, মরহুম আবদুস সালাম, মরহুম আবদুস সাত্তার ও মরহুম আবদুশ শুকুর, হাজী এজহার মিয়া, হাজী মরিয়ম খাতুন, কাঞ্চন আরা বেগম, হাসনারা বেগম ও মাজেদা খাতুন। মাদরাসার ভিত্তি প্রস্তর দেয়া হয় ১৯৮৬ সনে। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অশ্ৰুসিক্ত দোয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। তখনকার কেজি মাদরাসা পরে এবতেদায়ী আরো পরে দাখিল মাদরাসায় রূপান্তর হয়। মদিনার এই ছোট্র বাগানের নাম রাখা হয় ইছামতি মুহাম্মদীয়া আদর্শ দাখিল মাদরাসা। ১৯৯৬ সনে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড হতে ৯ম শ্রেণীর একাডেমিক অনুমতি লাভ করে এবং ১৯৯৭ সনে ১ম বারের মত দাখিল ১০ম শ্রেণির স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয়। ২০০১ সনের এপ্রিল মাসে ১ম এমপিও ভুক্ত হন শিক্ষক কর্মচারীগণ। ১/১/২০০৫ সনে বিজ্ঞান ও কম্পিউটার শাখা মাদরাসা বোর্ড হতে অনুমোদন লাভ করে। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর হতে স্বীকৃতি ও এমপিও ভুক্তিতে যাদের অবদান অবিশ্বরনীয় জনাব আলহাজ্ব আ ম ম শামশুল আলম চৌধুরী (অধ্যক্ষ, রাঙ্গুনিয়া আলমশাহ পাড়া কামিল মাদরাসা) মরহুম আলহাজ্ব মাওঃ সাইফুল হক (রাগুনীয়া) ও মাওঃ আবদুস সবুর (সুপার, মুহাম্মদীয়া আদর্শ দাখিল মাদরাসা,রাউজান) সহ আরো অনেকের নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে শত সহস্র বছর। আশা নিরাশার দুলাচলে যখন মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয় তখন আমি টগবগে যুবক। কিছুদিন না যেতেই এলাকার মানুষ দল বেঁধে মাদরাসার বিশাল গুরু দায়িত্বের ভার আমার কাঁধের উপর চাপিয়ে দেন। পাহাড়সম এই ভারি বোঝা বহন করার শক্তি সামর্থ আমার না থাকলেও আমি কামলে ওয়ালা নবির বাগানের মালি পরিচয় দেয়ার জন্য সেই বোঝা কাঁধ থেকে মাথায় তুলে নিয়ে আজো আছি, থাকব আমরন ইনশ আল্লাহ।